তাপসী রায় :
নিজেকে নারীত্বের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ না রেখে ভেঙ্গেছেন রক্ষণশীলতার আগল। সংসার সামলে মনযোগ দিয়েছিলেন ব্যবসায়, নিয়েছেন একের পর চ্যালেঞ্জ। ফলও পেয়েছেন। যখন যে কাজেই হাত দিয়েছেন, পেয়েছেন বিস্ময়কর সাফল্য। শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে ধীরে ধীরে উঠে আসেন দেশের ব্যবসায়ী সমাজের নেতৃত্বের কাতারেও। তিনি আফসিয়া জান্নাত সালেহ। সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি ট্রাভেল এজেন্সি নিয়ে গঠিত বাণিজ্যিক সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্র্যাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ আটাবের বর্তমান সহ সভাপতি। একই সাথে দেশের শীর্ষস্থানীয় ট্যুরস ও ট্রাভেল প্রতিষ্ঠান সায়মন গ্রূপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আটাবের পাশাপাশি আফসিয়া যুক্ত আছেন সদস্য, গভর্নিং বডি, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি ( ডিসিসিআই ), উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (উব্লিওসিসিআই), আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি, ই -ক্যাব ও ব্যবসায়িদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সদস্য হিসেবে। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন সেরা ট্রাভেল অপারেটর, সেরা নারী উদোক্তা, বেস্ট উইমেন লিডার ইন ট্রাভেল ইন্ডাস্ট্রি , বেস্ট ট্রাভেল এজেন্ট অ্যাওয়ার্ড সহ অসংখ্য পুরস্কার।
দেশের এভিয়েশন ও ট্যুরিজম ব্যবসার বর্তমান প্রেক্ষাপট, সমস্যা ও সম্ভাবনার পাশাপাশি আটাব নির্বাচন নিয়ে আফসিয়া জান্নাত সালেহ’র সাথে খোলামেলা আলোচনার অংশ বিশেষ তুলে ধরা হলো পাঠকদের উদ্দেশ্যে :
শুরুর কথা জানতে চাইলে আফসিয়া জান্নাত সালেহ বলেন, বাবা সাবেক আটাব ও হাবের সভাপতি মরহুম এম এ মোহাইমিন সালেহ’র অনুপ্রেরনা ও ইচ্ছাতেই পড়াশুনা চলাকালীন এই ট্রেড এ আসা ২০০৮ সালে। ২০১৫ সালে বাবার মৃত্যুর পর মানুষিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়ি, তবে সাথে সাথে এই ট্রেডে বাবার সুনাম ধরে রাখতে বেশ কিছু ব্যবসার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও দৃঢ় মনোবল নিয়ে ট্রাভেলস বিজনেসেই নিজেকে সম্পৃক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেই। শুরুটা খুব সহজ ছিলনা, তবে একজন নারী হিসেবে আট -দশজন যে প্রতিবন্ধকতার শিকার হয় আমার বেলায় তা একেবারে উল্টো। এই ট্রেডের সিনিয়র , জুনিয়র এবং সমসাময়িক সবারই সহযোগিতা পেয়েছি। আর সে কারনেই আমার চলার পথটা অনেকটাই মসৃণ।
বর্তমানে আটাবের মত সংগঠনের সহ সভাপতি। আগামী ৫ মার্চ নির্বাচনে আটাব গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের নেতৃত্বও দিচ্ছেন। জয়ের ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী ?
-আসলে নির্বাচনে জয় -পরাজয় বিষয়টা আমার কাছে মুখ্য নয়। আমি আগেই বলেছি বাবার সুনাম ধরে রাখতেই আমি ব্যবসার পাশাপাশি আটাবের বডিতে আসা। সদস্যদের মঙ্গলে সব সময় পাশে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকবো। সেই পথটা আরেকটু সহজ করতেই নির্বাচনে আসা। আমাদের এবারের স্লোগান ‘গড়ি তারুণ্যদীপ্ত অভিজ্ঞ সদস্যবান্ধব স্মার্ট আটাব’ কাজেই বুজতেই পারছেন আমরা কি চাই। আটাব কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয় যে আমার হারলে অনেক লোকসান হয়ে যাবে। নির্বাচনে জয় -পরাজয় থাকবেই। যারা আটাবকে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বানাতে চায় তাদের বিরুদ্ধেই আমাদের অবস্থান। অনেকেই আটাবকে রাজনৈতিক লেবাস দিয়ে নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধেও আমাদের অবস্থান। ইনশাআল্লাহ সাধারণ সদস্যদের মাঝে যে সারা পাচ্ছি আমার বিশ্বাস আটাব গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট পূর্ণ প্যানেলে নির্বাচিত হবে।
নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল। একজন নারী হিসেবে বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন ?
-নিঃসন্দেহে আমি গর্বিত একজন বাংলাদেশী হিসেবে জন্ম নিতে পেরে। পূর্ণভূমি সিলেটের রক্ষণশীল পরিবারে আমার জন্ম। একটা সময় যে বাংলাদেশে নারীরা চাকুরি করবে সেটাই ভাবা যেতনা সেই দেশের নারীরা এখন এভারেস্ট জয় করছে, উড়োজাহাজ -ট্রেন চালাচ্ছে , দেশি -বিদেশি খেলার বিভিন্ন ইভেন্টে জয় ছিনিয়ে আনছে। আসলে সফল সমাজ গড়তে হলে তরুণদের বিশেষ করে তরুণীদের এগিয়ে আসতে হবে। তবেই নারীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ট্রাভেল ট্রেডে নারীর সংখ্যা খুবই সামান্য কিন্তু সময়ের সাথে সাথে অনেক নারী উদোক্তা এখন ট্রাভেল ও ট্যুরুজম ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছেন এবং আমি আশা করি ভবিষ্যতে বিঙিন্ন ট্রাভেল এসোসিয়েশনে নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।
যদি মোটা দাগে জানতে চাই দেশের পর্যটন শিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা ?
-সাগরের গর্জন, পাহাড়ের নীরবতা, হাওরের সৌন্দর্য কোথাও আবার প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মাঝে হেঁটে চলা সবই আছে আমাদের দেশে। বৈচিত্র্যময় আমাদের এই দেশ পর্যটনের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। তবে এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে এই মুহূর্তে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ছোট ছোট অবকাঠামো, মানসম্মত রাস্তা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পর্যটন শিল্পের সমন্বয়হীনতা ও দক্ষ জনবলের অভাব দূর করতে হবে। সরকার ট্যুরিজম মাস্টার প্ল্যান হাতে নিয়েছে এবং এর বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে ট্যুরিজমের বিকাশ সম্ভব হবে।
আপনার চোখে দেশের এভিয়েশন সেক্টরের সম্ভাবনা ?
– ভৌগলিক অবস্থানের কারনে এই বাংলাদেশই হবে আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ পরিবহনের হাব। পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় কিছু পরিবর্তন হয় যেমন একসময় হংকং ছিল আন্তর্জাতিক হাব, এরপর হলো সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এখন দুবাই। আমি বিশ্বাস করি পূর্ব ও পশ্চিমের আকাশ পথের মধ্যবর্তী হওয়ায় এক সময় আমাদের কক্সবাজার বা হযরত শাহজালাল হবে আন্তর্জাতিক আকাশ পরিবহন হাব। রিফুয়েলিংয়ের জন্যই এখানে সবাই আসবে। তাছাড়া শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হওয়ার পাশাপাশি কক্সবাজার বিমানবন্দর এ পথকে আরও সুগোম করবে।
পর্যটকদের সেবায় নানা ত্রূটি নিয়ে আটাবের কিছু সদস্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে প্রায় সময় বিশেষ করে অনলাইন প্লাটফর্মে। এসব সমস্যা সমাধানে আপনাদের উদ্যোগ ?
– এখানে আমি বলবো পলিসির কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। কিছু এজেন্সি কমিটমেন্ট ফেল করে, এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। সেখানেও কাউকে এককভাবে দোষারোপ করা যায়না। আসলে এই বিজনেসটা অনেকটা চেইনের মত। কোথাও একটু বাধাগ্রস্ত হলে সেই দায় সবার উপরে পড়ে। তবে যাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আসে তাদের বিষয়ে মন্ত্রণালয় খুব শক্ত অবস্থানে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে জরিমানা এবং লাইসেন্স বাতিলও করা হয়।
আটাবকে ঘিরে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ?
-আমি বা আমাদের ফ্রন্ট কথায় নয়, কাজে বিশ্বাস করে। সদস্যদের কল্যাণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ত্ব দিয়ে সত্যিকার অর্থেই স্মার্ট আটাব গড়ে তোলাই আমার লক্ষ্য। সততা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার আটাব গঠনে আমরা আটাব গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট কাজ করে যাবো ও সকল সদস্যদের স্বার্থ নিশ্চিত করবো।
arthakarcha@gmail.com