ঢাকা ২৬ এপ্রিল ২০২৪:
শেষ হলো চারদিনব্যাপী জাতিসংঘ জলবায়ু অভিযোজন সম্মেলন ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্লান (ন্যাপ) এক্সপো ২০২৪। এর শেষ দিনে উন্নত দেশগুলোকে ন্যাপ বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা ও প্রযুক্তি সরবরাহ করার আহ্বান জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ।
২৫ এপ্রিল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে এই এক্সপোর সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। ন্যাপের সমাপনী অনুষ্ঠানে সচিব এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সম্পদ ও প্রযুক্তি প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উন্নত দেশগুলো। তাছাড়া, জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়ের সুরক্ষার জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ জরুরি।
স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে (এলডিসি) বাস্তব সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি, যেখানে ন্যাপ বাস্তবায়নের জন্য অর্থের অ্যাক্সেস এখনও চ্যালেঞ্জিং। ন্যাপ এক্সপোতে ন্যাপের অগ্রগতি মূল্যায়ন এবং এগিয়ে যাওয়ার কৌশল নির্ধারণের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম। ন্যাপ এক্সপোর ফলাফলকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে কপ২৯ এ একটি ইভেন্ট আয়োজনের প্রস্তাব দেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন সচিবালয়ের অভিযোজন বিভাগের ব্যবস্থাপক ডা. পল ডেসাঙ্কার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ জলবায়ু উন্নয়ন অংশীদারিত্বের মতো উদ্যোগের উল্লেখ করে জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে বাংলাদেশের স্থিতিস্থাপকতার প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, ন্যাপ সাফল্যের জন্য সরকারি, বেসরকারি স্টেকহোল্ডার এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা অত্যাবশ্যক। কার্যকর অভিযোজন কৌশলগুলির জন্য ডেটা, সক্রিয় পরিমাপ এবং অন্তর্ভুক্তি হাইলাইট করা হয়েছে। এছাড়া, তিনি জরুরি ভিত্তিতে ন্যাপ বাস্তবায়নের জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপের আহ্বান জানান।
সমাপনী অধিবেশনে স্বল্পোন্নত দেশ বিশেষজ্ঞ গ্রুপের ভাইস-চেয়ার আদাও সোয়ারেস বারবোসাও বক্তব্য রাখেন। সমাপনী অধিবেশন সঞ্চালনা করেন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লুবনা ইয়াসমিন। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। দেশের উপকূলীয় অঞ্চল বিলীন হয়ে যাচ্ছে সাগরের সীমানায়। লবণাক্ততার প্রভাব পড়েছে সুপেয় পানি, কৃষি, যোগাযোগ ও অভিবাসনে। বন্যা, তীব্র তাপপ্রবাহ, অনাবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়ের মতো পাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবেও ব্যাহত হচ্ছে অগ্রযাত্রা। বৈশ্বিক উষ্ণতাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবগুলোর পেছনে দায় কম হলেও এগুলোর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে বাংলাদেশকেই।
এর আগে ন্যাপ এক্সপোর উদ্বোধনী দিনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছিলেন, এখান উন্নত বিশ্বসহ এখানে ১০৪টি দেশের প্রতিনিধি আছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেই বার্তা আমরা স্পষ্টভাবে দিয়েছি। কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ২০৪১ সালের কৃষি কেমন হবে আমরা তাই তুলে ধরেছি। এখানে ডাগ ওয়েলের (পাতকুয়ার) ব্যবহার, সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহারে সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে। চাষাবাদ থেকে শুরু করে ফসল কাটা, সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণের স্মার্ট পদ্ধতির সবটা এখানে উঠে এসেছে।
জলাবদ্ধ এলাকায় সার্জন পদ্ধতির ব্যবহার সম্পর্কে তরিকুল বলেন, এক থেকে দেড় ফুট জমিতে মাটি কিছুটা উঠিয়ে তাতে নানারকম সবজি চাষ করা হবে। উপকূলে লবণাক্ত পানিতে চাষযোগ্য ধান, তরমুজ, পাট, আলুসহ নানা সবজির নানা জাত ও পদ্ধতি তুলে ধরা হয়। এ ছাড়াও দেখানো হয়েছে ভাসমান ও মালচিং পদ্ধতির চাষাবাদ যা বণ্যাপ্রবণ, উপকূলীয় ও হাওরাঞ্চলে পানির মধ্যেই করা যাবে। মোট কথা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কীভাবে স্মার্ট কৃষির মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে, তা তুলে ধরা হয়।
স্টলের কর্মকর্তারা জানালেন, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ আফ্রিকার নানা দেশের অতিথিরা আগ্রহ নিয়ে এসব মিনিয়েচার ও মডেল দেখেছেন এবং নানা খুঁটিনাটি জানতে চেয়েছেন।