জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর নিজেদের পরিকল্পনাতেই গড়ে উঠবে সহনশীল নগরÑএমন এক যুগান্তকারী উদ্যোগের ফলাফল তুলে ধরা হলো ঢাকার এক জাতীয় কর্মশালায় । ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক জলবায়ু স্মার্ট সিটির জন্য জনগণের অভিযোজন পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই প্রকল্পের আওতায় লাকসাম, ফেনী ও মীরসরাইয়ের মতো জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ শহরগুলোর সাধারণ মানুষ প্রথমবারের মতো নিজেদের সংকট মোকাবেলার পথ নিজেরাই তৈরি করেছে ।
প্রকল্পটি ইংল্যান্ড সরকারের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস দ্বারা অর্থায়ন এবং গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন দ্বারা কৌশলগত সহায়তা পেয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ এবং ইয়াং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন এটি বাস্তবায়ন করেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ এই প্রকল্পে কারিগরি সহায়তা প্রদান করেছে। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল অপর্যাপ্ত অবকাঠামোর কারণে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন-আয়ের জনগোষ্ঠীকে ক্ষমতায়ন করা।
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনের ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট টিমের ডেপুটি টিম লিডার এ বি এম ফিরোজ আহমেদ, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন, জিসিএ-এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রিতা লোহানী এবং ফেনী জেলার উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) ও ফেনী সদর পৌরসভার প্রশাসক গোলাম মোঃ বাতেন।
এই অঞ্চলের বাসিন্দারা বছরের পর বছর ধরে বন্যা, অতিবৃষ্টি, জলাবদ্ধতা এবং তাপপ্রবাহের মতো দুর্যোগ মোকাবেলা করে আসছেন । প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত জলবায়ু ঝুঁকি মূল্যায়ন সমীক্ষায় তাঁরা নিজেদের সমস্যাগুলোকে প্রথমবারের মতো গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছেন । কর্মশালায় লাকসাম থেকে আসা একজন কমিউনিটি প্রতিনিধি বলেন, “প্রতি বর্ষায় আমাদের বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যায় এবং নিরাপদ পানীয় জলের জন্য তীব্র সংকট দেখা দেয়, যদি ড্রেন করা যায় তবে এর সমাধান হয় । এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা আমাদের কথা বলার সুযোগ পেয়েছি।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের কারিগরি সহায়তায় পরিচালিত এই প্রকল্পের সবচেয়ে উদ্ভাবনী দিক ছিল এর কর্মকৌশল । এতে জিআইএস ম্যাপিং-এর মতো আধুনিক বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্তের সাথে পারিবারিক জরিপ ও দলীয় আলোচনার মাধ্যমে প্রাপ্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার এক দারুণ সমন্বয় ঘটানো হয়েছে । এর ভিত্তিতেই তৈরি হয়েছে ‘জনগণের অভিযোজন পরিকল্পনা’ , যা সম্পূর্ণভাবে স্থানীয় মানুষের প্রয়োজন ও অগ্রাধিকারের প্রতিফলন ।