স্টাফ রিপোর্টার :
দেশে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চিনির দাম ঊর্ধ্বমুখী। বিভিন্ন সময়ে বাজার থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে খোলা ও প্যাকেটজাত চিনি। পণ্যটির দাম বাড়ানো-কমানোর ঘটনাও ঘটছে হরহামেশা। এ অবস্থায় দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে এনে চিনির বাজার স্থিতিশীল করতে আমদানি শুল্কহার কমানোর বিষয়ে কাজ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
তবে শুল্ক কমালেও ভোক্তা পর্যায়ে চিনির দাম কতটা কমবে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। ভোক্তারা মনে করেন, সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিলেই হবে না, মাঠ পর্যায়ে তার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। আমদানি শুল্ক কমানোর পর বাজারে দাম না কমলে লাভ শুধু ব্যবসায়ীদেরই হবে। তাতে ক্রেতাদের স্বার্থরক্ষা হবে না।
গত মে মাসে প্রতি কেজি চিনিতে ১৬ টাকা বাড়িয়ে ১২৫ টাকা করা হয়েছিল। কিন্তু বাজারে আরও বেশি দামে চিনি বিক্রির অভিযোগ ওঠে। বর্তমানে বাজারে চিনির কেজি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। গত এক বছরে চিনির দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকট ও উচ্চ শুল্কহার চিনির দাম বাড়ার বড় কারণ।
এনবিআর সূত্র জানায়, চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে এবার শুল্ক কমানোর চিন্তা করা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধ বিবেচনা করে শিগগির চিনির ওপর আরোপিত শুল্কের ব্যাপারে নতুন সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
জানা গেছে, বর্তমানে অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে বিভিন্ন ধরনের মোট ৬১ শতাংশ শুল্ক আরোপিত আছে। বিশ্ববাজারে চিনি ও ডলারের দাম বাড়ার কারণে শুল্কের পরিমাণও বেড়েছে। প্রতি টন চিনি আমদানিতে ব্যবসায়ীদের শুল্ক গুনতে হচ্ছে ৩০-৩২ হাজার টাকা, যা আগে ছিল ২২-২৩ হাজার টাকা।
বর্তমানে চিনি আমদানিতে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট, ২ শতাংশ এআইটি (অগ্রিম আয়কর), ৩০ শতাংশ আরডি (রেগুলেটরি ডিউটি) ও ৫ শতাংশ এটি (অগ্রিম কর) নির্ধারিত আছে। এছাড়া প্রতি মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে ৩ হাজার টাকা সিডি (কাস্টমস ডিউটি) এবং পরিশোধিত চিনি আমদানিতেও একই পরিমাণ ৩ হাজার টাকা সিডি নির্ধারিত আছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, দেশীয় চিনিকলগুলোর চাহিদা পূরণের সক্ষমতা না থাকায় বিপুল পরিমাণে চিনি আমদানি করতে হয়। বাজার সহনীয় করতে এবং ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে চিনির শুল্কহার কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। কী পরিমাণ শুল্কহার কমান হবে, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে শুল্কহার বর্তমানের তুলনায় কমবে।
এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বারবার শুল্ক কমানোর জন্য এনবিআরকে অনুরোধ করা হলেও শুল্ক কমানোর বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে এখন বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শুল্কহার কমাতে কাজ করছে এনবিআর।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ১৩০ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা। গত বছরের একই সময়ে পণ্যটির দাম ছিল ৯০ থেকে ১০০ টাকা। সে হিসাবে বছরের ব্যবধানে চিনির দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ
দেশে চিনির বার্ষিক চাহিদা ২০-২২ লাখ টন। যার ৯৭ শতাংশই আমদানিনির্ভর। বাংলাদেশ ব্রাজিলের পর সবচেয়ে বেশি চিনি আমদানি করে ভারত থেকে। তবে ভারত থেকে বর্তমানে চিনি আমদানি বন্ধ থাকায় ব্রাজিল থেকে আমদানি করে বাজারজাত পর্যন্ত ৪৫-৬০ দিন পর্যন্ত সময় লাগছে।