নিজস্ব প্রতিবেদক: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ, ২০২৩-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। পরবর্তী কার্যক্রম নেয়ার জন্য শিগগির অধ্যাদেশটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
চলতি ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একক আওতাভুক্ত করে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে ইউজিসি গঠিত কমিটির সভায় গতকাল বৃহস্পতিবার সর্বসম্মতিক্রমে এ খসড়া চূড়ান্ত করা হয়।
সভায় জানানো হয়, কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ) নামে পৃথক একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের আগ পর্যন্ত এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, পরীক্ষা নেয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে যা-ই থাকুক না কেন, এ অধ্যাদেশ প্রাধান্য পাবে।
উল্লেখ্য, গত ১০ অক্টোবর ইউজিসিতে অনুষ্ঠিত একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের জন্য গঠিত কমিটির সভায় রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্যের অভিপ্রায় অনুসারে ভর্তি পরীক্ষা কার্যকরভাবে নেয়ার জন্য দ্রুত একটি অধ্যাদেশ জারির সুপারিশ করা হয়।
অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি কার্যক্রমে জটিলতা, দীর্ঘসূত্রতা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিরাপত্তাহীনতা ও দুর্ভোগ, অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় এবং সময়ক্ষেপণ পরিহারের লক্ষ্যে বিদ্যমান ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্নাতক পর্যায়ে কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা প্রবর্তনে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায়ের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে ‘আপাতত বলবৎ কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, সংবিধি, বিধি, প্রবিধি, প্রণীত আইন বা আইনের ক্ষমতাসম্পন্ন অন্য কোনো দলিলে যা কিছুই থাকুক না কেন, এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে যোগ্য বিবেচিত না হলে কোনো ভর্তিচ্ছু বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির জন্য উপযুক্ত মর্মে বিবেচিত হবে না।’
ভর্তি কার্যক্রমের বিষয়ে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ফল প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় এই ফল, শিক্ষার্থীদের এর আগে সম্পাদিত মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট বা সমমান ও উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট বা সমমান পরীক্ষার ফল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব শর্তাবলি অনুযায়ী মেধাক্রমের ভিত্তিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করবে।’
এছাড়া ‘কোনো বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে সীমিত পর্যায়ে শুধু সংগীত, চারুকলা, নৃত্যকলা, নাট্যকলা, স্থাপত্যবিদ্যা বা এ-জাতীয় অতি বিশেষায়িত বিষয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড অ্যাপটিটিউড টেস্ট গ্রহণ করতে পারবে। ভর্তি প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীবান্ধব এবং দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ নীতিমালা অথবা নির্দেশিকা প্রণয়ন করবে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বাধ্য হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। তার অভিপ্রায় বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য অধ্যাদেশ জারি করা প্রয়োজন। অধ্যাদেশ জারি হলে এর বাইরে গিয়ে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের কোনো সুযোগ থাকবে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় স্নাতক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হয়রানি ও দুর্দশা কমবে এবং ভর্তি প্রক্রিয়া সহজ হবে। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশটি স্বল্প সময়ের মধ্যে জারি করা হলে এইচএসসির পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পরে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক পর্যায়ে প্রবেশে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করার উদ্যোগ নেয়া হবে।’
সভায় ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষের অধ্যাদেশের খসড়ার বিস্তারিত দিক তুলে ধরেন। এছাড়া কমিশনের সচিব ড. ফেরদৌস জামান সভার শুরুতে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব তুলে ধরেন।